ঈদ উপলক্ষে সবাই পাঞ্জাবি কিনছে। কিন্তু না জানার কারণে একটি ব্যাপার অনেকেই খেয়াল করেন না আর তা হল পুরুষদের জন্য সিল্ক ব্যবহার করা হারাম। কিন্তু আপনি যেকোন পাঞ্জাবির দোকানে গেলেই প্রচুর সিল্কের পাঞ্জাবি পাবেন, তা আড়ং হোক, ইয়েলো হোক বা অন্যকোন ব্র্যান্ডের হোক না কেন। মসজিদে তরুণ থেকে শুরু করে বাপের বয়সী এমনকি অনেক বুড়োদের পর্যন্ত দেখা যায় উনারা সিল্কের পাঞ্জাবি পরেই সালাত আদায় করতে এসেছেন। অথচ তা সম্পুর্ণ হারাম। তিনি আসলে সিল্ক পরেননি, পরেছেন জাহান্নামের কুন্ডলি।
আড়ংসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের শপগুলোতে মূলত তিন ক্যাটাগরির পাঞ্জাবি পাওয়া যায়। সিল্ক, কটন এবং এন্ডি সিল্ক (ENDI silk)।
পিউর সিল্ক খুব সহজেই বোঝা যায় কিন্তু ENDI silk বোঝা একটু টাফ। এই সিল্কের কাপড়গুলো হালকা খসখসে হয়। তাছাড়া পাঞ্জাবির গায়ে লাগানো ট্যাগে লেখাও থাকে। অনেকেই না জানার কারণে এই হারাম জিনিস গায়ে দেন। ENDI silk আর আর্টিফিশিয়াল সিল্ক আলাদা। ENDI silk তো সরাসরি হারাম। আলিমরা বলেন আর্টিফিশিয়াল সিল্ক তথা কৃত্তিম সিল্ক জায়েজ তবে সেইফ সাইডে থাকার জন্য একজন মুমিনের উচিত সকল সন্দেহজনক হারাম থেকে দূরে থাকা। কেননা আর্টিশিয়াল সিল্কের মাঝে যে পিউর সিল্কের উচ্ছিষ্ট অংশ দেয়া হয়নি তা বুঝার সাধ্য সাধারণ মানুষের নেই। আড়ং এর কাস্টমার কেয়ারে ফোন দিয়ে কনফার্ম হলাম তাদের সিল্কের পাঞ্জাবিগুলো পিউর সিল্ক তথা রেশম পোকা থেকেই তৈরি। পিউর সিল্কের সাথে অন্যকোন ফেব্রিক্স মেশানো হলেও তা হালাল হয়ে যাবে না।
আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখেছি, তিনি ডান হাতে রেশম ধরলেন এবং বাম হাতে সোনা, অতঃপর বললেন, আমার উম্মতের পুরুষদের জন্য এ দু’টি বস্তু হারাম।’’
[আবু দাউদ ৪০৫৭, নাসায়ি ৫১৪৪, ইবন মাজাহ ৩৫৯৫]
রসুলুল্লাহ(ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিবসে বিশ্বাস রাখে সে যেন দুনিয়াতে রেশম বস্ত্র ও স্বর্ণের অলংকার পরিধান না করে।"
[মুসনাদে আহমাদঃ ২২২৪৮]
অপর এক হাদিসে এসেছে, রসুলুল্লাহ(ﷺ) বলেছেন, "আমার উম্মতের মধ্যে যে ব্যক্তি স্বর্ণ পরিধান করবে এবং তা পরিধান করা অবস্থায় মারা যাবে তার জন্য আল্লাহ জান্নাতের স্বর্ণ হারাম করে দিবেন। আর আমার উম্মতের মধ্যে যে ব্যক্তি রেশম বস্ত্র পরিধান করবে এবং তা পরিধান করা অবস্থায় মারা যাবে তার জন্য আল্লাহ জান্নাতের রেশম বস্ত্র হারাম করে দিবেন।" [মুসনাদে আহমাদঃ ৬৫৫৬]
রসুলুল্লাহ(ﷺ) আরও বলেন, আমার উম্মতের মধ্যে এমন কিছু লোক সৃষ্টি হবে, যারা ব্যভিচার, রেশম, মদ ও বাদ্যযন্ত্রকে হালাল সাব্যস্ত করবে।
[সহীহ বুখারী হাদীস : ৫৫৯০]
পুরুষদের জন্য হলুদ ও লাল জামা পরার ব্যাপারে হাদিসে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। লাল ও হলুদ রঙ পুরুষদের জন্য নাজায়েয। তাই এই কালারের পাঞ্জাবিও এড়িয়ে চলতে হবে।
রসুলুল্লাহ(ﷺ) আলি(রা) কে দুইটি হলুদ রঙয়ের কাপড় পরা অবস্থায় দেখলেন। তিনি তখন বলেন, এই রঙ কাফেরদের জন্য, এই রঙের কাপড় পরিধান করো না। [মুসলিমঃ ২০৭৭]
উমার(রা) বলেন,রসুলুল্লাহ(ﷺ) আমাদেরকে লাল রঙের পোশাক পরতে নিষেধ করেছেন।
(মুসনাদে আহমাদ,ইবনে মাজাহঃ ৩৫৯১)
তবে অন্য হাদীস দ্বারা প্রমানিত হয় যে, শুধু এক কালারের লাল না হয়ে যদি লালের মাঝে অন্য রঙের স্ট্রাইপ/চেক থাকে তাহলে সেটা পরা জায়েজ আছে। [বুখারীঃ ৫৪০০]
তবে অন্য রঙের স্ট্রাইপ/চেক থাকলেও তাকওয়ার খাতিরে লাল রঙ এড়িয়ে চলাই উত্তম।
পোশাকের বিস্তারিত হুকুম পাবেন এখানেঃ http://www.alkawsar.com/article/695
মহান আল্লাহ আমাদের সকলকে সব ধরণের হারাম থেকে হিফাজত করুন। আমিন।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন