ভ্যালেন্টাইন ডে – ইসলামে কি ভালবাসা নিষিদ্ধ?


“ তাঁর নিদর্শনসমূহের মাঝে আরো হলো, তিনি তোমাদের মধ্য থেকেই তোমাদের জন্য স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের মাঝে প্রশান্তি খুঁজে পাও। আর তিনি তোমাদের মাঝে ভালোবাসা এবং সৌহার্দ্য সৃষ্টি করে দিয়েছেন। নিশ্চয়ই এর মাঝে চিন্তাশীলদের জন্য নিদর্শন রয়েছে ”। [সূরা আর-রূম, আয়াত ২১] পরবর্তী আয়াতগুলোতে আল্লাহ সুবহানু ওয়াতায়ালা তাঁর আরো কিছু উল্লেখযোগ্য নিদর্শনের বর্ণনা দিয়েছেন। এখানে বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয় ব্যাপার হলো, আল্লাহ নারী-পুরুষের মধ্যকার এই সম্পর্ককে স্থান দিয়েছেন রাত-দিন এবং আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টির মত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু নিদর্শনের সাথে। অতএব বুঝতেই পারছেন, ভালোবাসা মোটেই তুচ্ছ কোন বিষয় নয়! “ কোন সন্দেহ নেই, তার জন্য আমার ভালোবাসায় কোন ঘাটতি ছিল না ” - বলুন তো, কথাগুলো কার হতে পারে? এই বাক্যটি ছিল আমাদের প্রিয় নাবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের, যা তিনি বলেছিলেন তাঁর স্ত্রী খাদিজা রাদিয়াল্লাহু আনহা সম্পর্কে। তিনি এখানে কোন লুকোছাপা করেননি। তিনি শুধু এও বলেননি যে, আমি তাকে ভালো বাসতাম। বরং তিনি তাঁর ভালোবাসাকে অত্যন্ত সুন্দরভাবে সবার মাঝে প্রকাশ করেছেন। সুতরাং এ থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট যে, ইসলামে ভালোবাসা মোটেই নিষিদ্ধ কিছু নয়। আল্লাহর জন্য আপনার মুসলিম ভাইকে ভালোবাসা, এমনকি সেই কথা তার কাছে প্রকাশ করার প্রতি বরং ইসলামে উৎসাহ দেয়া হয়েছে। কিংবা আপনি যদি সৎ এবং আল্লাহভীরু কোন দম্পতির দিকে তাকান, দেখতে পাবেন আল্লাহ ‘বিয়ে’ নামক অত্যন্ত শক্তিশালী একটি বন্ধনের মাধ্যমে তাদের কত কাছে নিয়ে এসেছেন। এটি কোন হলিউড বা বলিউড মুভির কৃত্রিম ভালোবাসার গল্প নয়, বরং পারস্পরিক সৌহার্দ্য আর সম্প্রীতির এক অনন্য বহিঃপ্রকাশ। ভালোবাসা যদি ইসলামে অনুমোদিতই হবে, তাহলে ভালোবাসা দিবস পালন করতে অসুবিধা কোথায়? এক্ষেত্রে প্রথম সমস্যাটি হলো ভ্যালেন্টাইন ডে’র উৎপত্তি প্রসঙ্গে। একেবারে সঠিক সময়টি নিয়ে মতবিরোধ থাকলেও, ভালোবাসা দিবসের মূল উৎপত্তি যে রোমান প্যাগানদের কাছ থেকে সে ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। তারা দেবতা লুপারক্যালিয়াসকে সন্তুষ্ট করার জন্য মধ্য ফেব্রুয়ারিতে এক ধরনের উৎসবের আয়োজন করতো, যেদিন পশু উৎসর্গ করা হতো এবং লটারির মাধ্যমে পরবর্তী এক বছরের জন্য নারীপুরুষের জোড়া নির্ধারণ করা হতো। খৃস্টানরা যখন রোম দখল করে নেয়, ভালোবাসা দিবসের প্রেক্ষাপটও খৃস্টানীকরণ করা হয়। লুপারক্যালিয়াসের জায়গা দখল করে নেয় সেইন্ট ভ্যালেন্টাইন। ক্যাথলিকদের ইতিহাসে মোটামুটি তিন জন বিখ্যাত সেইন্ট ভ্যালেন্টাইনের উল্লেখ পাওয়া যায়। একজন তো নিজেই প্রেমিক পুরুষ ছিলেন, একজন জেলারের মেয়ের প্রেমে পড়ে প্রাণ দিয়েছিলেন আর একজন সম্রাটের অলক্ষ্যে সৈনিকদের মধ্যে ঘটকালি করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছিলেন। ঘটনা যাই হোক, পোপ গেলিয়াসই সর্বপ্রথম খৃস্টান মোড়কে ভ্যালেন্টাইন ডে নিয়ে হাজির হন। তার আগে পিউরিটানদের সময় এটি নিষিদ্ধ ছিল। পরবর্তীতে আমেরিকায় এটি জনপ্রিয়তা লাভ করে এবং সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু এর মূল উৎস এখনও খুঁজে পাওয়া যাবে ভ্যালেন্টাইন ডে’র জনপ্রিয় প্রতীক কিউপিডের মাঝে, যা ছিল রোমান প্যাগানদের ভালোবাসা আর সৌন্দর্য্যের দেবতা। আর আজ আমরা মুসলিম নামধারীরা তবে কি পালন করছি? ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে কি আমরা সন্তুষ্ট নই? আল্লাহর জন্য যখন প্রতিটি মুসলিমকে সারা বছরই ভালোবাসার নির্দেশ দেয়া হয়েছে, আমরা কেন সেই ভালোবাসাকে একটিমাত্র দিনের মাঝে সীমাবদ্ধ করতে চাচ্ছি? আল্লাহকে বাদ দিয়ে যারা মূর্তিপূজা করতো, আমরা কি তবে সেই রোমান প্যাগানদের পূজার মাঝেই সুখ খুঁজে বেড়াচ্ছি না? ভেবে দেখুন, আপনি কি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হতে চান নাকি আমাদের প্রতিপালক যে পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থার জন্য আমাদের মনোনীত করেছেন, তার অন্তর্ভুক্ত থাকতে চান। আমরা আজ কেন অন্যের ধারস্থ হচ্ছি, যখন আমাদের জন্য সামনে আছে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষটির জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত? যিনি তাঁর স্ত্রীদের প্রতি ভালোবাসা আর দাম্পত্য জীবনের এক অসাধারণ ইতিহাস সৃষ্টি করে গেছেন আমাদের জন্য। “... প্রত্যেক জাতির জন্য আমি সৃষ্টি করেছি নির্দিষ্ট শারিয়াহ এবং নির্দিষ্ট পন্থা ...” [সূরা মায়িদাহ, আয়াত ৪৮] “ প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য আমি নির্ধারণ করে দিয়েছি ইবাদাতের সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি, যা তারা অনুসরণ করে থাকে ...” [সূরা হাজ্জ, আয়াত ৬৭] অর্থাৎ কিবলা, সালাত বা সিয়াম যেমন নির্দিষ্ট, মুসলিমদের উৎসবও তেমনি নির্দিষ্ট। কুফফার, তা সে মুশরিকই হোক আর আহলে কিতাব, তাদের অনুকরণ ইসলামে নিষিদ্ধ। আর তাদের প্রচলিত সংস্কৃতি এবং আচরণের চেয়ে বেশি অনুকরণযোগ্য আর কি-ই বা হতে পারে? আল্লাহ ইসলামকে সকল দেশের সকল মানুষের জন্য উপযোগী করে পাঠিয়েছেন। অতএব জীবনের চলার পথে কোন ক্ষেত্রেই কুফফারের অনুকরণ মুসলিমদের প্রয়োজন নেই। এটি পরীক্ষিত সত্য যে, যারা কাফিরদের অনুকরণ করে বা তাদের উৎসবে অংশগ্রহণ করে, তাদের মাঝে কাফিরদের জন্য ভালোবাসা সৃষ্টি হয় এবং তারা কাফিরদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করতেও ইতস্তত বোধ করে না। তারা মুসলিম, ইসলামের ইতিহাস, ইসলামের বীরযোদ্ধাদের ভুলে গিয়ে কাফিরদের নিয়েই সার্বক্ষণিক মেতে থাকে। দ্বিতীয়ত ভালোবাসা দিবসের নামে দেশব্যাপী অশ্লীলতা আর বেহায়াপনার যে প্রদর্শনী চলে, তা কোনভাবেই ইসলামে অনুমোদিত নয়। পার্টি, কনসার্ট আর মোজ মাস্তির নাম দিয়ে তরুণ-তরুণীদের অবাধ মেলামেশা, হাসিঠাট্টা বা উপহার আদানপ্রদান; কোনটাই ইসলামে বৈধ নয়। দাড়িওয়ালা বয়ফ্রেন্ড, হিজাবি গার্লফ্রেন্ড, নিষ্পাপ দৃষ্টি কিংবা যাস্ট ফ্রেন্ড নাথিং এলসের কোন স্থান ইসলামে নেই। সাবধান!! কোনভাবেই যেন আমরা ভ্যালেন্টাইন ডে’র ইসলামাইজেশন করার চেষ্টা না করি। তাহলে? ইসলামে ভালোবাসার প্রক্রিয়াটা কেমন? যাকে আমরা সত্যিই ভালোবাসি, এই পৃথিবীতে আমরা তার উন্নতি এবং পরকালে তার সফলতা কামনা করি। আমরা ঠিক সেভাবেই তাদের ভালোবাসি যেভাবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল আমাদের শিখিয়েছেন। এর জন্য আমাদের কোন অবৈধ সম্পর্ক আর বেহায়াপনার আশ্রয় নিতে হয় না কিংবা হাজার হাজার টাকা এবং আমাদের মূল্যবান সময়ের অপচয় করতে হয় না। “ যারা পরস্পরকে ভালোবাসে, তাদের জন্য বিয়ের চেয়ে উত্তম আর কিছুই নেই ” [সুনান ইবন মাজাহ] “ আর বিশ্বাসী পুরুষ এবং বিশ্বাসী নারীরা হচ্ছে একে অপরের বন্ধু। তারা সৎ কাজের নির্দেশ দেয় এবং অসৎ কাজে নিষেধ করে, আর তারা সালাত প্রতিষ্ঠা করে এবং যাকাত আদায় করে, আর তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আদেশ মেনে চলে। তাদের প্রতি অবশ্যই আল্লাহ করুণা বর্ষণ করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সম্মানিত এবং মহাজ্ঞানী ” [সূরা তাওবা, আয়াত ৭১] আমরা শুধু নির্দিষ্ট একটি দিনেই আমাদের ভালোবাসাকে সীমাবদ্ধ করে রাখি না। আর আমাদের দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত নয়, এমন কোন উৎসবও আমরা পালন করি না। কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “ যে ব্যক্তি কারো অনুকরণ করে, সে তাদের অন্তর্ভুক্ত ”। সবাইকে ভালবাসলাম, কিন্তু যিনি আমাদের এই পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন, আমাদের জন্য আলো বাতাস মাটি পানি সৃষ্টি করেছেন, যার আরো অসংখ্য নিয়ামাতের মাঝে আমরা দিবানিশি নিমজ্জিত, তাঁকে ভালোবাসার কথা কি আমাদের একবারও মনে হয়েছে? তাঁর প্রিয়তম মানুষটিই শিখিয়ে গেছেন সেই দু’আ, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “ দাউদ আলাইহিস সালামের একটি দু’আ ছিল এরকম, হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে ভিক্ষা চাই আপনার ভালোবাসা; আপনাকে যারা ভালোবেসেছে, তাদের ভালোবাসা এবং এমন কাজ যা আপনাকে ভালোবাসার কাছাকাছি নিয়ে যায়। হে আল্লাহ! আমার নিজের সত্তা, পরিবার এবং শীতল পানির চেয়েও আপনার প্রতি ভালোবাসা, আমার কাছে প্রিয়তর করে দিন ”। Collected From Brother Imran Helal

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

পুরুষদের জন্য সিল্ক ব্যবহার করা হারাম।

বিয়ে, দ্বীনদার স্ত্রী এবং মানসিক সাপোর্ট !

ফাতিমার ঐতিহাসিক সেই চিঠি ও "Happy New Year''