বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম
দেয়ালে ঝুলে থাকা হিজরি ক্যালেন্ডারের ফটোকপিটা মনে করিয়ে দিচ্ছে আজকে মুহাররামের দশ তারিখ। হিজরি ১৪৩৫ সাল।
ইতিহাসের পাতায় ভর করে চলে গেলাম ১৪৩৩ বছর আগের ঠিক এই দিনে। মদিনাতে সেদিন একটি ছোট কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ কথোপকথন হয়। বিখ্যাত সাহাবা এবং একজন আলেম আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বর্ণনা করেন যে, তাঁর চাচাতো ভাই, শেষ নবী এবং আল্লাহ কর্তৃক মানবজাতির কাছে প্রেরিত শেষ রাসূল, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদল ইহুদির পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন । তারা ঐদিন রোযা পালন করছিলো। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন তারা কেন রোযা পালন করছে। তারা উত্তরে জানালো, “এটা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ একটা দিন। এই দিনে আল্লাহ তাঁর নবী মূসা (আলাইহিস সালাম) ও তাঁর সম্প্রদায়কে ফিরআউন ও তার লোকজনের হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন। তাই মূসা (আলাইহিস সালাম) আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতাস্বরুপ এই দিনে রোযা রাখতেন । তাই আমরাও এইদিনে রোযা রাখি।”
অন্য বর্ণনায় এসেছে, “এই দিনে আল্লাহ মূসা (আলাইহিস সালাম) ও বনী ইসরাঈলকে ফিরআউনের বিরুদ্ধে বিজয় দান করেন।” তখন রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “মূসা (আলাইহিস সালাম) এর ওপর তোমাদের চাইতে আমাদের বেশি অধিকার রয়েছে।”
এই ছোট্ট আলোচনাটিতে উঠে এসেছে ভালো এবং মন্দের চিরায়ত দ্বন্দ্বের ইতিহাস। এটা হচ্ছে ঈমান এবং কুফরের লড়াই। ঠিক এই মূহুর্তে পৃথিবীর পরিস্থিতি চিন্তা করে আমার উপলব্ধি হল যে, এ লড়াই এখনও শেষ হয়নি। এই উপলব্ধি থেকে কিছু কথা মাথায় এলো।
ক. ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটে:
প্রায় হাজার বছর আগে বনী ইসরাইলিরা ছিলো একটি অত্যাচারিত জাতি। তারা পৃথিবীর সবচাইতে ক্ষমতাশালী এবং অত্যাচারী শাসক দ্বারা শাসিত ছিল। তাদেরকে এই দাসত্ব থেকে মুক্ত করে স্বাধীনতার দিকে ধাবিত করার জন্য আল্লাহ মূসা (আলাইহিস সালাম) কে পাঠান। মূসা (আলাইহিস সালাম) ছিলেন আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষের কাছে প্রেরিত হাজারো নবীদের মাঝে একজন। আর এই নবীগণ মানুষকে প্রধানত তিনটি মূলনীতি শিক্ষা দিতেন:
- মহাবিশ্ব এবং এতে যা কিছু আছে সব কিছুর একমাত্র সৃষ্টিকর্তা হলেন আল্লাহ।
- সুতরাং আমরা কেবলমাত্র তাঁরই কাছে নিজেদেরকে সমর্পণ করতে বাধ্য এবং আমাদেরকে কেবলমাত্র তাঁরই ইবাদত করতে হবে। (অর্থাৎ তাওহীদ)
- তাওহীদ সঠিকভাবে প্রয়োগের পন্থা শুধুমাত্র নবীদের শিক্ষার মাঝে খুঁজে পাওয়া যায়। (অর্থাৎ ইসলামে)
এজন্য হিজরতের পরে মূসা (আলাইহিস সালাম) এর সর্বপ্রথম কাজটি ছিল বনী ইসরাইলীদের কাছ থেকে এ বিষয়ে প্রতিশ্রুতি নেওয়া। তাদের মধ্যে একটা ক্ষুদ্র অংশই এই প্রতিশ্রুতির প্রতি আন্তরিক ছিল। আর তাদেরকে নিয়েই সেই যুগের মুসলিমদের প্রথম সমাজ গড়ে উঠে। তারাই ছিল মূসা (আলাইহিস সালাম) এর সময়কার মুসলিম। তারা তাদের জীবনকে তাওহীদের বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো। তাদের সমাজে বিদ্যমান তাওহীদের মূলনীতিগুলো ফুটে ওঠে 'দশ আজ্ঞা' বা টেন কমান্ডমেন্টস(Ten Commandments) এ। তাদের পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী অনেক নবী-রাসূলরাও এই একই নীতি শিক্ষা দিয়েছিলেন। এই নবী-রাসূলদের মধ্যে ছিলেন নূহ (আলাইহিস সালাম), ইব্রাহিম (আলাইহিস সালাম) ও ঈসা (আলাইহিস সালাম)। আর মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ছিলেন এই ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ সংযোজন। এদের সবাইকে এই একই নীতি শেখানোর জন্য মানবজাতির কাছে পাঠানো হয়েছিলো। যারা রাসূলুল্লাহকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অনুসরণ করতে সম্মত হয়েছিল অর্থাৎ এখনকার মুসলিমরাই শুধুমাত্র এই বিশ্বাসমালার পরিপূর্ণ উত্তরসূরী। অন্য সবাই এই শিক্ষাকে হয় বিকৃত করে ফেলেছে নয়তো একেবারেই অস্বীকার করছে। তাই আমরা মূসা (আলাইহিস সালাম) এর যোগ্যতর উত্তরসূরী এবং মূসা (আলাইহিস সালাম) এর উপর অন্য সবার চাইতে আমাদের অধিকার বেশি। তাই রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মদিনার ইহুদীদের প্রতি উদ্দেশ্য করে বলেন, “মূসা (আলাইহিস সালাম) এর ওপর তোমাদের চাইতে আমাদের অধিকার বেশি।”
বনী ইসরাইলীদের উত্তরসূরীরা কেবল তাদের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গই করেনি। এমনকি তাদের কিতাবকে পরিবর্তন করে এবং পরবর্তী নবীদের অস্বীকার করেই ক্ষান্ত হয় নি, বরং তারা আজকে এতদূর পর্যন্ত চলে গেছে যে তারা নিজেরাই ফিরআউনের ভুমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। মূসা (আলাইহিস সালাম) এর যে শিক্ষা বনী ইসরাইলিদের ফিরআউনের নিপীড়ন থেকে মুক্ত করেছিলো, সে শিক্ষায় দীক্ষিতদেরকেই এখন বনী ইসরাইলিদের উত্তরসূরীরা ফিরআউনি কায়দায় নিপীড়ন করছে। এর সত্যতা আমরা এখন প্রতিনিয়ত দেখতে পাচ্ছি ফিলিস্তিন এবং অন্যান্য জায়গায়।
সুতরাং ঈমান এবং কুফরের মধ্যকার এ লড়াইয়ে সকল নবী রাসূলই অংশগ্রহণ করেছেন। খুব কম সংখ্যক মানুষই নবী-রাসূলদের পক্ষ অবলম্বন করতো এবং ইতিহাস জুড়ে খুব কম সংখ্যক মানুষই তাদের বিশ্বাসকে গ্রহণ করেছিলো। এই লড়াইয়ের শুধু স্থান-কাল-পাত্র পরিবর্তন হয়। লড়াই এর মূল প্রকৃতি অপরিবর্তিত থাকে।
খ. এই সংক্ষিপ্ত আলোচনা কেবল এ লড়াইয়ের ইতিহাসকেই তুলে ধরে না বরং এর ভবিষ্যত সম্পর্কেও ধারণা দেয়।
অনুসারীদের প্রতি মুসা (আলাইহিস সালাম) এর প্রতিশ্রুতিকে আল্লাহ কুরআনে এভাবে তুলে ধরেছেন,
“মূসা বললেন তার কওমকে, সাহায্য প্রার্থনা কর আল্লাহর নিকট এবং ধৈর্য্য ধারণ কর। নিশ্চয়ই এ পৃথিবী আল্লাহর। তিনি নিজের বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা এর উত্তরাধিকারী বানিয়ে দেন এবং শেষ কল্যাণ মুত্তাকীদের জন্যই নির্ধারিত রয়েছে। তারা বলল, আমাদের কষ্ট ছিল তোমার আসার পূর্বে এবং তোমার আসার পরে। তিনি বললেন, তোমাদের পরওয়ারদেগার শীঘ্রই তোমাদের শক্রদের ধ্বংস করে দেবেন এবং তোমাদেরকে দেশে প্রতিনিধিত্ব দান করবেন। তারপর দেখবেন, তোমরা কেমন কাজ কর।” [সুরা আ’রাফ ১২৮-১২৯]
এরপর তিনি অত্যাচারীদের ধ্বংসের সূচনা পর্বের কথা উল্লেখ করেন এবং পর্যায়ক্রমে তাদের ধ্বংস করে দেওয়ার অঙ্গীকার করেন। কুরআনে বর্ণিত এই সূচনা পর্বটি ছিল তাদের অর্থনীতিতে আঘাত।
“তারপর আমি পাকড়াও করেছি-ফেরাউনের অনুসারীদেরকে দুর্ভিক্ষের মাধ্যমে এবং ফল ফসলের ক্ষয়-ক্ষতির মাধ্যমে যাতে করে তারা উপদেশ গ্রহণ করে” [সুরা আরাফ ১৩০]
কিন্তু তারা এ থেকেও শিক্ষা নেয় নি।
“তারা আরও বলতে লাগল, আমাদের উপর জাদু করার জন্য তুমি যে নিদর্শনই নিয়ে আস না কেন আমরা কিন্তু তোমার উপর ঈমান আনছি না।” [সুরা আরাফ ১৩২]
বরং তাদের সেনাবাহিনীর ঔদ্ধত্যই কেবল বৃদ্ধি পেয়েছিলো।
“ফেরাউন ও তার বাহিনী অন্যায়ভাবে পৃথিবীতে অহংকার করতে লাগল এবং তারা মনে করল যে, তারা আমার কাছে প্রত্যাবর্তিত হবে না।” [আল ক্বসাস ৩৯]
তাই আল্লাহ তাদেরকে তাদের রাজত্বের অবশ্যম্ভাবী পতনের আরও পাঁচটি সতর্ককারী নিদর্শন দিয়ে জবাব দিলেন। মজার ব্যাপার হলো এই নিদর্শনগুলোর প্রথমটি ছিলো একটি বন্যা। “সুতরাং আমি তাদের উপর পাঠিয়ে দিলাম বন্যা ...” [আরাফ ১৩৩] কিন্তু এরপরও তাদের অবিশ্বাস এবং ঔদ্ধত্য অব্যাহত রইলো। অবশেষে একসময় তাদের অত্যাচারী শাসন শেষ হলো যেমনটি মদীনার ইহুদিরা বর্ণনা করেছিলো, “আল্লাহ তাঁর নবী মূসা ও তাঁর সম্প্রদায়কে ফিরআউন ও তার লোকজনের হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন এবং ফিরআউন ও তার লোকজনকে ডুবিয়ে মেরেছিলেন।” আল্লাহ নিজেও এই ঘটনা কুরআনে বর্ণনা করেছেন,
'সুতরাং আমি তাদের কাছে থেকে বদলা নিয়ে নিলাম-বস্তুতঃ তাদেরকে সাগরে ডুবিয়ে দিলাম। কারণ, তারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছিল আমার নিদর্শনসমূহকে এবং তৎপ্রতি অনীহা প্রদর্শন করেছিল। আর যাদেরকে দুর্বল মনে করা হত তাদেরকেও আমি উত্তরাধিকার দান করেছি এ ভুখন্ডের পূর্ব ও পশ্চিম অঞ্চলের যাতে আমি বরকত সন্নিহিত রেখেছি এবং পরিপূর্ণ হয়ে গেছে তোমার পালনকর্তার প্রতিশ্রুত কল্যাণ বনী-ইসরাঈলদের জন্য তাদের ধৈর্য্যধারণের দরুন। আর ধ্বংস করে দিয়েছে সে সবকিছু যা তৈরী করেছিল ফেরাউন ও তার সম্প্রদায় এবং ধ্বংস করেছি যা কিছু তারা সুউচ্চ নির্মাণ করেছিল। '[আরাফ ১৩৬-১৩৭]
ফিরআউন নিজেকে পৃথিবীতে ইলাহ হিসেবে দাবী করতো। কিন্তু অবশেষে তার অবস্থা বর্ণনা করার জন্য রোমান সাম্রাজ্যের পতন সম্পর্কিত আর্থার ফেরিলের এই তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্যটিই যথেষ্ট হয়ে যায়।
'রোমান সাম্রাজ্য সম্পর্কে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এটাই যে রোমান সাম্রাজ্য অধঃপতিত হতে হতে একসময় ধ্বংস হয়ে যায়।'
এটা একটা কালোত্তীর্ণ সত্য । তাওহীদকে অস্বীকারকারী এবং তাওহীদের অনুসারীদের বিরোধিতাকারী প্রতিটি জাতি, সমাজ এবং ব্যক্তির ক্ষেত্রেই তথ্যটি প্রযোজ্য । সাম্প্রতিক সময়ে এরূপ অশনিসংকেতবহ ঘটনার মধ্যে রয়েছে স্যান্ডি নামক ঘূর্ণিঝড় এবং পেট্রাউস নামের এক জেনারেল। এ খেলায় অংশগ্রহণকারী চরিত্রগুলোর প্রত্যেকের পরিণতি আমাদের সামনে উন্মুক্ত।
গ. হাজারো ফিরআউনীয় কারাগারের একটির অসংখ্য সেলের একটি সেলের টেবিলে বসে এই লেখাটি যখন আমি লিখছি তখন অতীতের সাথে বর্তমানকে মিলিয়ে নিতে গিয়ে আরেকটি বিষয় আমার মাথায় এসেছে।
আমি চোখ বন্ধ করে বনী ইসরাঈলের একজন মুসলিমের জায়গায় নিজেকে কল্পনা করার চেষ্টা করলাম।
সারা রাত ধরে হেঁটে চলেছি। দীর্ঘ রাতের শেষে সূর্যোদয়ের সময় হয়ে এলো প্রায়। অবশেষে সমুদ্রতীরে এসে পৌঁছলাম। সামনে আদিগন্ত জলরাশি। হঠাৎ পিছন ফিরে তাকাতেই মেরুদন্ডে ভয়ের শীতল স্রোত বয়ে গেল। এলিট ফোর্সের নেতৃত্ব দিয়ে ফেরআউন নিজে আমাদের ধরতে ছুটে আসছে। আমি অস্থির হয়ে ডানে-বামে তাকালাম। আমার সহযাত্রী ভাই-বোনেরাও প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত শত্রুবাহিনীর দিকে অসহায়ভাবে তাকিয়ে আছে। ফেরআউনের বাহিনী দ্রুতগতিতে এগিয়ে আসছে। তারা কি আমাদের ধরে ফেলবে? নাকি তার আগেই আমরা সমুদ্রে ডুবে আত্মহত্যা করব? কি করব কিছুই বুঝতে পারছি না। একজন আর্তনাদ করে মুসা (আলাইহিস সালাম) কে বলল, “আমরা যে ধরা পড়ে গেলাম!”[সূরা শুআরাঃ ৬১] মুসা (আলাইহিস সালাম) বলে উঠলেন, “কখনই নয়,আমার সাথে আছেন আমার পালনকর্তা। তিনি আমাকে পথ বলে দেবেন।” [সূরা শুআরাঃ ৬২] হঠাৎ তিনি হাতের লাঠিটি দিয়ে সমুদ্রের পানিতে আঘাত করলেন আর সাথে সাথেই সমুদ্রের পানি দু'ভাগ হয়ে উঁচু পর্বতের চূড়ার মত আকার ধারণ করল। মাঝখানে তৈরি হওয়া পথ দিয়ে আমরা সমুদ্র অতিক্রম করলাম। যেতে যেতে পিছু ফিরে ফেরআউন আর তার বাহিনীকে একনজর দেখার চেষ্টা করলাম। কুফর, অহংকার আর অত্যাচারের মূর্ত প্রতীক সেই বাহিনীকে সমুদ্রে ডুবে যেতে দেখলাম। অথচ এই কিছুক্ষণ আগেও আমরা নিজেদের জীবনের ভয় করছিলাম। ফেরআউন ও তার বাহিনী ভেবেছিল শীঘ্রই তারা আমাদের ধরে ফেলবে। আমরাও ভেবেছিলাম এই বুঝি ধরা পড়ে গেলাম! কিন্তু যখন তারা নিজেদের সবচেয়ে বেশি ক্ষমতাবান মনে করছিল আর আমরা নিজেদের সবচেয়ে বেশি অসহায় মনে করছিলাম ঠিক তখনই চোখের পলকে পাশার দান উলটে গেল।
ঈমান আর কুফরের এই যুদ্ধের গতিপ্রকৃতি এমনই হয়।
অতঃপর আমি পবিত্র কুরআনের সূরা ক্বামারে এলাম। এখানেও চল্লিশ নং আয়াতে এসে আবার ফিরআউনের উল্লেখ পেলাম,
“আমি কোরআনকে বোঝবার জন্যে সহজ করে দিয়েছি। অতএব,কোন চিন্তাশীল আছে কি? ফেরাউন সম্প্রদায়ের কাছেও সতর্ককারীগণ আগমন করেছিল। তারা আমার সকল নিদর্শনের প্রতি মিথ্যারোপ করেছিল। অতঃপর আমি পরাভূতকারী, পরাক্রমশালীর ন্যায় তাদেরকে পাকড়াও করলাম। তোমাদের মধ্যকার কাফেররা কি তাদের চাইতে শ্রেষ্ঠ ? না তোমাদের মুক্তির সনদপত্র রয়েছে কিতাবসমূহে? না তারা বলে যে, আমরা এক অপরাজেয় দল? এ দল তো সত্ত্বরই পরাজিত হবে এবং পৃষ্ঠপ্রদর্শন করবে।” [সূরা আল ক্বামার: ৪০-৪৪]
এই আয়াতের ব্যাপারে খুব সুন্দর একটি মন্তব্যের দিকে আমি আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আয়াতগুলো নাযিল হয়েছিল মক্কায়। তখন মুসলিমরা মুসার (আলাইহিস সালাম) সময়ের বনী ইসরাইলিদের মতো অত্যাচারিত হচ্ছিল। নির্যাতনের কোন শেষ দেখতে পাচ্ছিলো না। ঠিক যেমনভাবে আজকের মুসলিমরাও প্রতিনিয়ত অত্যাচার-নির্যাতনের মধ্য দিয়ে জীবন অতিবাহিত করছে। এই মন্তব্যটি করেছিল স্বয়ং উমার বিন আল খাত্তাব (রাদিয়াল্লাহু আনহু)। তিনি বলেছিলেন, “যখন এই আয়াতগুলো নাযিল হয়, তখন আমি নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করলাম, কারা পরাজিত হবে? কাদের পাকড়াও করা হবে?”
কারণ উমার (রাদিয়াল্লাহু আনহু) যা শুনছেন তার সাথে বাস্তব পরিস্থিতির মিল খুঁজে পাচ্ছিলেন না। যাই হোক, অল্প কয়েক বছর পরেই দৃশ্যপট বদলে গেল। উমার (রাদিয়াল্লাহু আনহু) এবং তাঁর সাথীরা মক্কার তপ্ত রোদের মাঝে নয় বরং শত শত মাইল দূরে বদরের প্রান্তরে নিজেদের আবিষ্কার করলেন। সেখানে তারা অত্যাচারী সরকারের কাছে বন্দী অবস্থায় নয়, বরং একটি যুদ্ধের ময়দানে সেই অত্যাচারী নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। আর আমরা এখন জানি শেষ পর্যন্ত যুদ্ধটিতে মুসলিমরা জয়লাভ করে আর পৌত্তলিক কুরাইশদের শোচনীয় পরাজয় ঘটে। উমার (রা) বললেন, 'যখন বদরের দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্ম পরিধান করছিলেন এবং বারবার বলছিলেন, “এই দলতো শীঘ্রই পরাজিত হবে এবং পৃষ্ঠ প্রদর্শন করবে ” এবং ঠিক তখনই আমি আয়াতটির অর্থ পুরোপুরি উপলব্ধি করতে পারলাম।'
সূর্য ডুবছে। আমার ইফতারের সময় হয়ে এল।
লিখেছেন: তারিক মেহান্না
আশুরার দিনে অর্থাৎ মুহাররামের ১০ তারিখ, ১৪৩৪ (২৪ নভেম্বর ২০১২)
যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল প্রিজন থেকে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন